মারগারিতা মামুন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সপ্তদশবর্ষী এক রাশিয়ান রিদমিক জিমন্যাস্ট। সোভিয়েত শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে ১৯৮৩ সালে মস্কো যান রিতার বাবা আবদুল্লাহ আল মামুন। রাজশাহীর সন্তান মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মামুন রুশ নারী আন্নাকে বিয়ে করে সংসার পাতেন রাশিয়ায়। ১৯৯৫ সালের ১লা নভেম্বর মস্কোতে তাদের সংসার আলো করে জন্ম নেন রিতা। বাবা-মা’র দুই সন্তানের মধ্যে রিতা বড়।
বর্তমান অবস্থা:
মারগারিতা ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে এক নম্বর পজিশনে অবস্থান করছেন। ২০১৩ ওয়ার্ল্ডকাপ ও ২০১১-১৩ টানা তিন মওসুম রাশিয়ান ন্যাশনাল অল-অ্যারাউন্ড চ্যাম্পিয়ন এর গৌরব অর্জন করেন। ইন্টারন্যাশনাল এলিট লেভেলের জিমন্যাস্ট রিতা কাজানের গ্রীষ্মকালীন ইউনিভার্সিয়াডেও অল-অ্যারাউন্ড চ্যাম্পিয়ন।
রিতার ক্যারিয়ার:
খুব অল্প বয়সেই রিতা রিদমিক জিমন্যাস্টিকস চর্চা শুরু করেন। রিতা যখন জিমন্যাস্টিক চর্চা শুরু করেন তখন তার বয়স ছিল সাত বছর। তিনি সাবেক ওয়ার্ল্ড রিদমিক চ্যাম্পিয়ন আমিনা জারিপোভার কাছে প্রশিক্ষণ নেন। জুনিয়র জিমন্যাস্ট হিসেবে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন রিতা। ২০০৫ সালে এস্তোনিয়ায় অনুষ্ঠিত মিস ভ্যালেন্টাইন কাপে কারোলিনা সিবাস্তিয়ানোভার সঙ্গে জুটি বেধেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের হয়েও রিদমিক জিমন্যাস্টিকস প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু একটা পর্যায়ে রাশিয়ার হয়েই অংশ নেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।
২০১১ সালে সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয় রাশিয়ার চ্যাম্পিয়নশিপে হুপ ও বলে অল-অ্যারাউন্ড চ্যাম্পিয়নের পালক। ২০১১ সালেই প্রথম সিনিয়র হিসেবে অংশ নেন মন্ট্রিয়লে ওয়ার্ল্ড কাপে। ১০৬.৯২৫ পয়েন্ট অর্জন করে অল-অ্যারাউন্ড জিতে নেন ব্রোঞ্জ। আর বল ফাইনালে ২৭.০২৫ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম স্থান অধিকারী রিতার মুকুটে যুক্ত হয় স্বর্ণ। এরপর ২০১২ সালে দারিয়া দিমিত্রিকোভার সাথে জুটি বেঁধে জাপানে এওন কাপে স্বর্ণ, কিয়েভে ওয়ার্ল্ড কাপে বল ও ক্লবসে স্বর্ণ, হুপ, বল আর রিবনে ব্রোঞ্জ পদক, মস্কো গ্রান্ড প্রিক্সে রিতা অল-অ্যারাউন্ডে নবম স্থান, তাসখন্দ ওয়ার্ল্ডকাপে অল-অ্যারাউন্ডে চতুর্থ হন। ২০১৩ সালে মস্কো গ্র্যান্ড প্রিক্সে স্বর্ণ জয় করেন। ২০১৩ মালে ওয়ার্ল্ডকাপ চ্যাম্পিয়নশিপে বল ও ক্লাবসে স্বর্ণ এবং হুপে ব্রোঞ্জ, ভিয়েনায় ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে টিম ও রিবনে স্বর্ণ, হুপ-বল ও ক্লাবসে রূপা, ২০১৩ সালে সেন্টপিটার্সবুর্গে ওয়ার্ল্ডকাপ ফাইনানে অল-অ্যারাউন্ড, হুপ, রিবন ও ক্লাবে স্বর্ণ এবং বলে রূপা অর্জন করেন। ২০১৩ সালে কাজান গ্রীষ্মকালীন ইউনিভার্সিয়াডে অল-অ্যারাউন্ড, হুপ, ক্লাবস ও বলে স্বর্ণ জয় করেন।
রুশ নাগরিক হলেও রিতার শরীরে বইছে বাঙালি রক্ত। অকপটেই তিনি স্বীকার করেন এ উত্তরাধিকার। ছোটবেলায় বাবার সাথে বেশ কয়েকবার ঘুরে গেছেন বাংলাদেশ থেকে। ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলাও বলতে পারতেন। রাশিয়ার গণমাধ্যমে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন ‘বাংলার বাঘিনী’ নামে। ইউরো স্পোর্ট নামের একটি রুশ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে উঠে এসেছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত জিমন্যাস্ট রিতা।