অভিনব এক পদ্ধতিতে সদ্য জন্ম নেয়া নিজেদের রাজপুত্রকে স্বাগত জানিয়েছে বজ্র ড্রাগনের দেশ নামে খ্যাত ভুটানের জনগণ। রাজপরিবারের নতুন এ অতিথির আগমন উপলক্ষে দেশব্যাপী এক লাখ ৮ হাজার বৃক্ষরোপণ করেছে তারা।
ভুটানের বর্তমান রাজা জিগমে খেসার নামগিল ওয়াংচাক ও রানি জেটসান পেমার ঘরে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেয় তাদের যুবরাজ। রাজপরিবারের পক্ষ থেকে তার জন্মের সংবাদ ঘোষণা করার এক মাস পরই বৃক্ষরোপণের এ পদক্ষেপ নেয়া হয়।
দেশটির সরকারি এবং বিরোধী- উভয় দল মিলেই কাজটি সম্পন্ন করেছে। বৌদ্ধপ্রধান দেশ ভুটানের রাজপরিবারের পরবর্তী এই উত্তরসূরির জন্ম উপলক্ষে প্রার্থনার অংশ হিসেবেই বৃক্ষরোপণের উদ্যোগটি নেয়া হয়েছিল।
বৌদ্ধ ধর্মানুসারে, গাছ একটি পবিত্র বস্তু। একে দীর্ঘায়ু, সৌন্দর্য, সুস্বাস্থ্য এবং মমতার প্রতীক বলে মনে করে ভুটনীরা। উদ্যোগের অন্যতম উদ্যোক্তা তেনজিন লেপখেল বলেন, ‘বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারে ১০৮ একটি পবিত্র সংখ্যা। এর মাধ্যমে নির্বাণ লাভের ১০৮টি বাঁধা দূর হয়।’
বৃক্ষরোপণকারীদের মধ্যে ৮২ হাজার জন প্রত্যেকে একটি করে গাছ লাগিয়েছে। আর বাকি ২৬ হাজার জন স্বেচ্ছসেবী হিসেবে কাজ করেছে।
গাছ লাগানোটা ভুটানীদের স্বভাবজাত। গত বছর ৪৯ হাজার বৃক্ষরোপণ করে আগের বিশ্ব রেকর্ডটি ভেঙেছিল তারা। এবার নিজেদের করা রেকর্ডটি ভাঙল দেশটির জনগণ। ভুটানে বর্তমানে মোট ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশই বনাঞ্চল।

উল্লেখ্য, ভুটানের বর্তমান রাজা ওয়াংচুক ভারত ও যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৬ সালে তিনি সিংহাসনে বসেন। ভুটানে গণতন্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কাজ শুরু করেছেন তিনি। ২০০৮ সালে ভুটানে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রীয় কাজে রাজার ক্ষমতা একেবারে সীমিত করে আনেন ওয়াংচুক।
২০১১ সালে রাজা জিগমে ওয়াংচুক বিয়ে করেন জেতসুন পেমাকে। বিশ্বে সুখী দেশ হিসেবে পরিচিত ভুটান। এ ছাড়া দেশটির নাগরিকদের মাথাপিছু আয়ও ভালো। ফলে সেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই বললেই চলে।
১৯৬০ সালে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ভুটান। ১৯৭৪ সালে দেশটিতে প্রথম দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যমকে সংবাদ প্রচারের অনুমোদন দেয়া হয় এবং ১৯৯৯ সালে প্রথম ইন্টারনেট ও টেলিভিশন কার্যক্রমের সূচনা হয়। ভুটানের অধিবাসীরা নিজেদের দেশকে মাতৃভাষা জংকা ভাষায় ‘দ্রুক ইযুল’ বা ‘বজ্র ড্রাগন’র দেশ নামে ডাকে।