ভয়ানক ব্যাধিতে সন্তানকে হারিয়েছেন হিথার ক্লার্ক। আড়াই বছর আগে ২০১৩ সালের জুন মাসে মৃত্যু হয়েছে তার ৭ মাসের শিশু পুত্র লুকাস ক্লার্কের। ছেলের মৃত্যুতে খুব ভেঙে পড়েছিলেন হিথার। কিন্তু সেসময়ই একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। ছেলের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো অন্যদের জন্য দান করে দেবেন। একটাই আশা ছিল তার। অন্যদের মাঝে যেন নিজের সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখা যায়।
লুকাসের দেহের বিভিন্ন অঙ্গ দিয়ে প্রাণ বেঁচেছে আরও তিনজনের। এদের মধ্যে একজন ফিনিক্সের জর্ডান ড্রেক। লুকাসের থেকে একমাসের বড় জর্ডান হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে জন্মেছিল। আর একারণে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে হয়েছে তাকে। অ্যারিজোনা প্রদেশের এক অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংস্থার সদস্য জ্যাকলাইন কিদেল যোগাযোগ করিয়ে দেন লুকাস এবং জর্ডনের পরিবারের মধ্যে। লুকাসের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করানো হয় জর্ডানের শরীরে। আর তার পরে পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ আড়াই বছর। এখন জর্ডান আর পাঁচটা বাচ্চার মতো স্বাভাবিকভাবেই জীবন কাটাচ্ছে, খেলছে, দৌড়ে বেড়াচ্ছে। সে প্রস্তুতি নিচ্ছে স্কুলে যাওয়ার। 
নিজের সন্তানের জীবনের আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন জর্ডানের মা এস্থার গোঞ্জালেজ। লুকাসের হৃদযন্ত্র নিয়ে তার মেয়ের সুস্থ হওয়ার বিষয়টি সত্যি যেন ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিলেন না বাকরুদ্ধ এই মা। আর একারণেই তিনি বলেছেন, ‘ক্লার্ক দম্পতিকে কিছু বলার ভাষা নেই। ধন্যবাদ খুব ছোট একটা শব্দ। শুধুমাত্র এটুকুই বলতে চাই আমি খুব কৃতজ্ঞ।’
চার বছরের শিশু জর্ডানের বুকে নিজের ছেলের হৃৎস্পন্দন শোনার জন্য প্রায় ৬শ মাইল পেরিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ফিনিক্স এসেছিলেন হিথার।জর্ডানের বুকে স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে তা নিজের কানে শুনতে প্রথমে কিছুটা দ্বিধাবোধ করছিলেন তিনি। কিছুক্ষণ চুপ থেকে খুব ধীরে ধীরে কানে লাগালেন স্টেথোস্কোপ। শুনতে পেলেন হৃদপিণ্ডের ধুকধুকানি। পাশে থাকা জর্ডানের মা এস্থার ফিসফিস করে হিলারের কানের কাছে বললেন, ‘এটা তোমার ছেলে।’ আর মুহূর্তের মধ্যেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন হিথার। কত বছর পর ছেলের হৃৎস্পন্দন শুনলেন তিনি।
মা হওয়ার পর এটিই তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ অনুভূতি এমনটাই জানালেন হিথার। পরে হিথার এবং এস্থার দু’জন পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন। তারা দু’জনেই সেসময় কেঁদে ফেলেন লুকাসের কথা স্মরণ করে। তারা জানিয়েছেন, এটা সত্যিই অন্যরকম এক অনুভূতি। তারা নিজেদের মধ্যে ঠিক করেছেন যখনই পারবেন নিজেরা দেখা করবেন। এ সম্পর্কে এস্থার বলেন, ‘আমরা পরস্পরকে ভালোবাসি। আমরা এখন এই জীবনটা এক সঙ্গে উপভোগ করব। আর এখানে জর্ডানের ভেতর সব সময় থাকবে লুকাস। এটা সত্যিই খুব সুন্দর।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করাটা কত মহৎ কাজ। কেন আমরা সবাই এধরনের মহৎ কাজ করি না? আমরা কেনো কারো জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসি না? হিথার এবং লুকাসের জন্য আজ আমার মেয়ে জর্ডান বেঁচে আছে। এটাই আমাদের কাছে সব কিছু।’