অনিতা মণ্ডল থাকেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ভাঙড়ে। বাড়ি-বাড়ি কাজ করে তার সংসার চলে । স্বামী তার মদ পান করে প্রতিদিন মারধর করে। সংসারে অশান্তি নিত্য ঘটনা। এমনকি ক্লাস সেভেনে পড়া মেয়েকেও বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন মদের টাকা যোগার করার জন্য। তারপর থেকে মেয়েকে নিয়ে একাই থাকেন অনিতা।
হাফিজা বেগম, পাচ সন্তানের মা, স্বামীকে হারিয়ে নিজেই ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছিলেন। কিন্তু ছেলেগুলো বড় হতেই মদ খাওয়া শুরু করে। বিক্রি করে দিয়েছে বাড়ি। হাফিজার ঠাঁই এখন এক চিলতে ভাড়ার ঘরে অবিবাহিত দুই মেয়েকে নিয়ে।
বুধবার কলকাতায় হাফিজা, অনিতা ও তাঁদের মতোই অনেক মহিলা পথে বের হয়েছিলেন। ঝাঁটা আর মদ্যপান-বিরোধী পোস্টার হাতে স্লোগান তুললেন, ‘মদ চাই না দুধ চাই, মদমুক্ত বাংলা চাই’ কিংবা ‘মদ সন্ত্রাস দূর করো, দুধ-মধুতে বাংলা ভরো।’ পার্ক সার্কাস থেকে বৌবাজারের আবগারি দফতর পর্যন্ত সেই মিছিলে পথ হাঁটলেন তারা। আপনজনের মদ্য পানের কারণে তাদের পারিবারিক জীবন ধ্বংসের মুখে। বিষাক্ত মদ খেয়ে মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া এ রাজ্য অন্য রকম এক অভিজ্ঞতার সাক্ষী।
অনিতারা বলছেন,গ্রামের ছেলেরা বারো-তেরো বছর বয়স হতে না হতেই মদ্যপান শুরু করছে । মদের টাকা জোগাড় করতে কেউ কেউ চুরি-ছিনতাই করছে। বাড়ছে গ্রামের মেয়েদের নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করাও। মিছিলের আয়োজক ‘ওয়েলফেয়ার পার্টি অব ইন্ডিয়া’র সদস্য সুজাউদ্দিন জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনার গ্রামাঞ্চলে একটা বড় অংশের মানুষের জীবিকা কৃষি, মাছধরা কিংবা দিনমজুরি। আয় খুবই সামান্য। যার বেশির ভাগটাই খরচ হয়ে যাচ্ছে মদের পিছনে। ইদানীং মদের লাইসেন্স পাওয়া সহজ হওয়ায় বেড়ে গিয়েছে মদের দোকানের সংখ্যা। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে লাইসেন্স-বিহীন দোকানও। মদ্যপানের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিই তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য জানিয়ে সুজাউদ্দিন বলেন, ‘‘সরকারকে সবার আগে এটা নিয়ে ভাবতে হবে। মদের দোকানকে ঢালাও লাইসেন্স দেওয়ায় রাশ না টানা হলে যুবসমাজকে এই মারাত্মক নেশা থেকে বাঁচানো যাবে না।’’