স্ত্রীকে ভালোবেসে সম্রাট শাহজাহান অজস্র কারিগর এবং প্রকৌশলী লাগিয়ে তৈরি করেছিলেন তাজমহল। ভালোবাসার এই নিদর্শন আজো আমাদের মুগ্ধ করে। কিন্তু কিছুদিন আগেই চীনদেশের এক বৃদ্ধ দম্পতির ভালোবাসার চমকপ্রদ কাহিনী উঠে এসেছে আমাদের সামনে যা তাজমহলের সৌন্দর্যকেও ম্লান করে দেয়।
কাহিনীর শুরু আজ থেকে অর্ধশতক আগে। ১৯ বছর বয়সী চৈনিক তরুণ লিউ গো-জিয়াং ভালোবেসে ফেলেন চার সন্তানের জননী, ২৯ বছর বয়সী বিধবা জু ঝাও-কিং কে। সে আমলে কমবয়সী ছেলেদের সাথে বেশি বয়সী মেয়েদের সম্পর্ক কেউ মেনে নেবে না জেনেই বাচ্চাদেরকে নিয়ে এই দুই প্রেমিক প্রেমিকা পালিয়ে যান নিজেদের গ্রাম থেকে এবং দূরের এক পাহাড়ের গুহায় বসবাস করতে শুরু করেন। প্রথম দিকে তাদের জীবন ধারণ ছিল দুঃস্বপ্নের মত কঠিন।
খাবার আর পানির ছিল অভাব, দুর্গম পাহাড়ের ওপরে ছিল না বিদ্যুৎ সরবরাহ। ঘাস লতাপাতা সংগ্রহ করে পেট চলতো এই পরিবারের। শুধুমাত্র হস্তচালিত কিছু যন্ত্রপাতি দিয়ে লিউ জঙ্গল পরিষ্কার করে জমি তৈরি শুরু করেন। এরই মাঝে একদিন তিনি লক্ষ্য করলেন, পাহাড়ি পথে ওঠানামা করতে বেশ কষ্ট হয়ে যায় তার স্ত্রী জু-এর। এর পর থেকেই তিনি শুরু করেন পাহাড় কেটে সিঁড়ি বানানোর এই বিশাল কাজ। এর পর কেটে যায় বছরের পর বছর, কিন্তু লিউ এর সঙ্কল্প টলে না বিন্দুমাত্রও। একটু একটু করে তিনি জয় করেন এই বিশাল বাধা। এ কাজে তিনি ক্ষয় করে ফেলেন ২০ টিরও বেশি বাটালি।
এ ব্যাপারে লিউ এবং জু এর সন্তান লিউ মিংশেং বলেন, তার বাবা ও মা একে অপরকে এতটাই ভালোবাসতেন যে তারা কখনো একে অপরকে ছেড়ে থাকতেন না। তাদের বাবা একাই তৈরি করেন ৬০০০ এর বেশি সিঁড়ির ধাপ, যদিও তাদের মা খুব পাহাড়ের নিচে খুব একটা নামতেন না। কালক্রমে তাদের সন্তানরা পাহাড় ছেড়ে অন্যত্র বসবাস শুরু করলেও লিউ এবং জু থেকে যান তাদের পুরনো বাড়ীতেই।
২০০১ সালে এই বিশাল সিঁড়ি এবং লিউ ও জু এর বাসস্থান আবিস্কার করে একদল অভিযাত্রী এবং ২০০৬ সালে চীনের শ্রেষ্ঠ ভালোবাসার গল্পের মাঝে স্থান পায় তাদের এই কাহিনী। পরবর্তীতে ২০১০ সালে এ নিয়ে একটি চলচ্চিত্রও তৈরি শুরু হয়, যার নাম “Love Ladder”। সম্প্রতি ৭২ বছর বয়সে মারা যান লিউ এবং রেখে যান তার এই কালজয়ী উপাখ্যান।