১৯৬৯ সালের ২৪ জুলাই আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করেন জেনিফার লোপেজ। তিনি কেবল গান বা অভিনয় নয়, একাধারে প্রযোজক, নৃত্যশিল্পী এবং ফ্যাশন ডিজাইনারও। এ পর্যন্ত তিনি অর্ধশতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। টেলিভিশনের কমেডি অনুষ্ঠান ‘ইন লিভিং কালার’-এ একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও কালক্রমে সঙ্গীত, অভিনয়, প্রযোজক, ফ্যাশন ডিজাইনার ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখেন। জেনিফার লোপেজের জীবনের বিভিন্ন খুঁটিনাটি তথ্য এই পেজটিতে তুলে ধরা হয়েছে।
অভিনয় জীবনের শুরুর দিকের কথা
নিউইয়র্কের রোলেক্স নামের ছোট্ট শহর থেকে উঠে এসেছিলেন লোপেজ। এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন লোপেজ। ১৯৮৬ সালে তিনি ‘দ্য লিটল গার্ল’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে অভিনেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৯৭ সালে ‘সেলিনা’ শিরোনামের একটি জীবনীমূলক চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ হয় তার। ব্যাস আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি তাকে। এই ছবিতে অভিনয় করেই বর্ষসেরা অভিনেত্রী হিসেবে অর্জন করেন ‘অ্যালমা অ্যাওয়ার্ড’। এর আগে মাত্র ৫ বছর বয়সে একই সঙ্গে নাচগানের হাতেখড়ি নিয়েছিলেন জেলো। জেনিফার লোপেজকে সংক্ষেপে ‘জেলো’ নামে ডাকা হয়। ১৭ বছর বয়সে তিনি লিভিং কালার নামের কমিডি শোতে একটি হাসির চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৯৯ সালে মুক্তি পায় লোপেজ এর আরেক মুভি ‘আউট অব সাইট’। ছবিটির জন্য ওই বছরও লোপেজ অ্যালমা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। এরপর তিনি একের পর এক সফল ছবি উপহার দিতে থাকেন।
সংগীত জীবন
প্রথমে অভিনয় দিয়ে নিজের মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়ে গায়িকা হিসেবে লোপেজ আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৯৯ সালে। তার প্রথম অ্যালবাম ‘অন দ্য সিক্স’। মুভির মতো শুরুতেই সংগীত জগতেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন লোপেজ। এই অ্যালবামের ‘ইফ ইউ হেট মাই লাভ' এবং 'ওয়েটিং ফর টু নাইট' গান দুটি তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয়। ২০০০ সালে তার দ্বিতীয় একক প্রকাশিত হয়। অ্যালবামটির শিরোনাম ছিল জেলো। স্প্যানিশ ভাষাভাষি ভক্তদের জন্য ২০০৭ সালে তিনি একটি স্প্যানিশ অ্যালবামও প্রকাশ করেন। ২০১১ সালে জেলোর ৭ম একক লাভ মুক্তি পায়। এ অ্যালবামের অন দ্য ফ্লোর গানটি বিলবোর্ডের শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছিল। ২০১০ জেলো সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া শিল্পীর তালিকায় স্থান করে নেন। একই বছর তিনি সেরা শিল্পীর তালিকায়ও জায়গা করে নেন। সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য জেলো গ্র্যামি পুরস্কারও জিতে নিয়েছেন।
প্রেম-ভালোবাসা এবং বিয়ে
প্রেম-ভালোবাসা এবং বিয়ে নিয়ে সবসময়ই ঝামেলা পড়তে হয় জেনিফার লোপেজকে। এ কারণে অনেকবার তিনি মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছেন। এই প্রেম-ভালোবাসা নিয়েই তার জীবনে অনেক দু:সময় পার করতে হয়েছে। এ পর্যন্ত লোপেজ তিনবার বিয়ে করেছেন। সর্বশেষ তার বয়সের চেয়ে ২০ বছর কম বয়সী ক্যাসপার স্মার্ট এর প্রেমে পড়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দেন লোপেজ। সর্বশেষ তাদের মধ্যেও ব্রেকআপ হয়ে গেছে। লোপেজের প্রথম স্বামীর নাম ওজানি নোয়া। ১৯৯৭ সালে তাকে বিয়ে করেন। পরের বছরই বিচ্ছেদ ঘটে। দ্বিতীয় স্বামীর নাম ক্রিস জুড। ২০০১ সালে তাদের বিয়ে হয়। ২০০৩ সালে বিচ্ছেদ ঘটে। তবে তাদের ঘরে লোপেজের কোনো সন্তান নেই। সর্বশেষ স্বামী মার্ক অ্যান্থনির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ২০০৪ সালে এবং ২০১২ সালে বিচ্ছেদ ঘটে। মার্ক অ্যান্থনির সংসারে তার দুই যমজ সন্তান রয়েছে। তাদের নাম ম্যাক্স ও এম্মি।




ছবিতে: উপরে বাম পাশ থেকে ১ম ও ২য় স্বামী ও নিচে ৩য় স্বামী ও সাবেক প্রেমিক
বিশ্বের সবচেয়ে দামী তারকা
বিশ্বের সবচেয়ে দামী তারকার তালিকায় ২য় অবস্থানে রয়েছেন জেনিফার লোপেজ। ১ম অবস্থানে রয়েছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ২০১৩ সালে তার আয় ৩ কোটি ডলারেরও বেশি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেনিফার লোপেজ আয় করেছেন ২ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
ব্যর্থ লোপেজ
ব্যর্থতা খুব বেশি লোপেজকে স্পর্শ করতে না পারলেও ছিটেফোটা থেকে বাদ পড়েননি লোপেজ। ‘পার্কার’ নামক একটি মুভিতে লোপেজ অভিনয় করেন। এই ছবিটি নির্মাণ করা হয় ৩৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে। তবে সারা বিশ্ব থেকে টেইলর হেকফোর্ডের এই ছবিটির মোট আয় ১৭ মিলিয়ন ডলার, যা মোট বাজেটের মাত্র ৪৯ শতাংশ।
আইকন অ্যাওয়ার্ড
সারাজীবনের কীর্তি এবং বিশ্বসঙ্গীতের জনপ্রিয়তায় ধারাবাহিক অবদানের জন্য বিলবোর্ড সাময়িকী আইকন অ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকে। এ পর্যন্ত পুরস্কারটি পেয়েছেন নীল ডায়মন্ড, স্টিভি ওয়ান্ডার ও প্রিন্স। তিনজনই গায়ক। এবার অবশ্য আইকন অ্যাওয়ার্ড যাচ্ছে একজন গায়িকার কাছে। তিনি জেনিফার লোপেজ। এদিক দিয়ে অনন্য কীর্তি গড়ছেন ৪৪ বছর বয়সী এই গায়িকা। ২০১৪ সালে এই অ্যাওয়ার্ডটির জন্য মনোনীত হয়েছেন জেনিফার লোপেজ।
টিভি সিরিজে লোপেজ
অভিনয়, গান, নাচের বাইরে রিয়েলেটি শো-তে অংশগ্রহণ করেন লোপেজ। এবার টিভি ড্রামা সিরিজ এ অভিনয় করছেন লোপেজ। ‘শেডস অব ব্লু’ নামের নতুন এক টিভি ড্রামাতে অভিনয় করবেন লোপেজ। ওই ড্রামা সিরিজটি প্রযোজনা করছে এনবিসি চ্যানেল। ১৩ পর্বের ওই ধারাবাহিকের নির্বাহী প্রযোজক হিসেবেও থাকবেন লোপেজ। সিরিজটিতে একজন ছদ্মবেশী গোয়েন্দা হারলি ম্যাক-কর্ডের ভূমিকায় থাকবেন লোপেজ আর তাকে ঘিরেই আবর্তিত হবে সিরিজের কাহিনী।
সেরা ক্ষমতাধর নারী
২০১২ সালের মে মাসে প্রকাশিত ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বিশ্বের বিনোদন জগতের সেরা ১০০ নারীর মধ্যে ১ম স্থানটি দখল করেন জেনিফার লোপেজ। এর আগের বছর জেনিফার লোপেজ ছিলেন এই তালিকায় ৫০ নাম্বারে। বিনোদন-কেন্দ্রিক আয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে উপস্থিতি ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে জনপ্রিয়তা এসবের ভিত্তিতেই এই তালিকা তৈরি করা হয়।
বিশ্বকাপ ফুটবল থিম সংয়ে লোপেজ
ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের থিম সংয়ে পিটবুলের সাথে দেখা যাবে জেনিফার লোপেজকে।
মোবাইল ব্যবসায়ী লোপেজ
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত লাতিন আমেরিকার অভিবাসীদের জন্য ভিবা মোবিল' ব্রান্ডের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১৫টি মোবাইল ফোনের দোকান চালু করেছেন জেনিফার লোপেজ। এসব দোকানে ভেরিজনের মোবাইল ফোন বিক্রি করা হবে। জেনিফার লোপেজ ভিবা মোবিলের বেশির ভাগ শেয়ারের মালিক। একইসঙ্গে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান সৃজনশীল কর্মকর্তা এবং ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবেও কাজ করবেন।