চীনের মহাপ্রাচীর বা গ্রেট ওয়াল অব চায়না (Great Wall of China) এর নাম শুনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটি পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যগুলোর মধ্যে একটি। প্রতিবেশী মাঞ্চুরিয়া আর মঙ্গোলিয়ার যাযাবর দস্যুদের হাত থেকে চীনকে রক্ষা করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল চীনের এই মহাপ্রাচীর বা গ্রেট ওয়াল অব চায়না। চীনের উত্তরে গোবী মরুভূমির পূর্বাংশে ছিল দুর্ধর্ষ মঙ্গলদের বাস। লুটতরাজই ছিল তাদের জীবিকার প্রধান উৎস। এদের হাত থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য চীনের প্রথম সম্রাট চিন শি হুয়াং এর নির্দেশে চীনের প্রাচীর নির্মাণের কাজ আরম্ভ হয়। প্রাচীরটি নির্মাণ করা হয়েছিল চিহলি উপসাগরের তীরে শানসিকুয়ান থেকে কানসু প্রদেশের চিয়াকুমান পর্যন্ত। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে প্রাচীরটি নির্মাণ করা হয়েছিল সেটি সফল হয়নি। কারণ প্রাচীরটির অনেক জায়গা প্রায়ই ভেঙ্গে পড়ত। আবার অনেক সময় মঙ্গলীয় দস্যুরা প্রাচীর ভেঙ্গে চীনা লোকালয়ে ঢুকে লুটপাট চালাত।
খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকে থেকেই বিভিন্ন স্থানে অনেকগুলো দেয়াল নির্মাণ করেছিলেন চীনা শাসকরা। এ দেয়ালের সবচেয়ে বিখ্যাত অংশটি নির্মিত হয়েছিল চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ শতকে মিং রাজবংশের আমলে।
পৃথিবীর দীর্ঘতম এই প্রাচীরটি, দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৬৯৫ কিলোমিটার বা প্রায় ১৬৮৪ মাইল এবং প্রায় ৩২ মিটার চওড়া। কথিত আছে এর উপর দিয়ে প্রায় ১২টি ঘোড়া একসাথে দৌড়ে যেতে পারত। যা স্থান করে নিয়েছে পৃথিবীর ৭ম আশ্চর্যের তালিকায়।
দেয়ালটিতে নিয়মিত বিরতিতে পর্যবেক্ষণ চৌকি আছে, যা অস্ত্র সংরক্ষণ, সেনাবাহিনীর আবাসন এবং স্মোক সংকেত প্রদানে কাজে লাগত। সেনা-ঘাঁটি এবং প্রশাসনিক কেন্দ্রসমূহ দীর্ঘ বিরতিতে অবস্থিত। গ্রেট ওয়ালের সীমানার মধ্যে সেনা ইউনিটগুলোর যোগাযোগ যেমন—দলকে শক্তিশালী করা এবং শত্রুদের আন্দোলন সম্পর্কে সাবধান থাকা ছিল উল্লেখযোগ্য। দেখার সুবিধার জন্য পাহাড়সহ অন্যান্য উঁচু-স্থানে সংকেত টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছিল।
এই মহা-প্রাচীরকে কল্পনা করা হয় বিশাল ড্রাগনের সাথে। এর বিস্তৃতি শাংহাইকুয়ান থেকে পশ্চিমে টপলেক পর্যন্ত। শুরু আর শেষের দিকে মহা-প্রাচীরকে দেওয়া হয়েছে ড্রাগনের মাথা আর লেজের আকৃতি। ড্রাগনের এই লেজ গিয়ে নেমেছে সমুদ্রের পানিতে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিদিনই অগণিত পর্যটক আসেন গ্রেট ওয়াল এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কারণ এর চারপাশের রয়েছে অসাধারণ সুন্দর সব দৃশ্য। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখানে পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে। তবে শীতে যখন তুষার পড়ে, গ্রেট ওয়াল আর পাহাড়ের সারি তুষারে ঢাকা পড়ে যায়। তখন অন্যরকম এক সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। সারা বছরই গ্রেট ওয়ালের উপর ভীষণ দ্রুত বেগে বাতাস বইতে থাকে। আর শরৎ ও শীতে তো কথাই নেই। তবু সেই হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করে গ্রেট ওয়াল দেখার লোভ সামলাতে পারেন না পর্যটকগণ।