একপাশে আটলান্টিক মহাসাগর, আরেক পাশে প্রশান্ত মহাসাগর, মাঝে আমেরিকা মহাদেশ। এজন্য সমুদ্রগামী জাহাজকে আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণভাগ ঘুরে প্রায় আট হাজার মাইল পাড়ি দিতে হত। পণ্যবাহী জাহাজের সমুদ্রযাত্রার সময় এবং ব্যয় কমিয়ে আনতে বিংশ শতকের শুরুর দিকে পানামা খাল খনন করা হয়। আমেরিকা মহাদেশের দুই অংশ উত্তর আমেরিকা আর দক্ষিণ আমেরিকা যুক্ত হয়েছে পানামার সরু অংশ বা পানামা ইসমাসের মাধ্যমে। তাই সিদ্ধান্ত হয় এখান দিয়ে খাল খননের মাধ্যমে সহজেই সমুদ্রযাত্রার ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু কাজটি মিশরের সুয়েজ খাল খননের মত ছিল না। সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের মত গভীর খাল খনন করার কাজটি ছিল ভীষণ ব্যয়বহুল। তাই পানামার মূল ভূখণ্ডে একটি কৃত্রিম লেক গাতুন লেক তৈরি করা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গাতুন লেকের পানির উচ্চতা ৮৫ ফুটের মত। ১৯১৪ সালে চালুর সময় গাতুন লেক ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় কৃত্রিম লেক। পানামা খালের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচল বলতে মূলত এই লেকের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচলকেই বোঝানো হয়। এই লেকটির পানির উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠের চেয়ে বেশি হওয়ায় দু’পাশের প্রবেশ-মুখে দু’টি করে লক বসানো হয়েছে। সমুদ্র থেকে জাহাজ প্রথমে একটি লকের মধ্যবর্তী এলাকায় এসে থামে। এরপর অন্য লক খুলে লেক থেকে পানি নিয়ে আসা হয়। বদ্ধ জায়গায় আরও পানি পেয়ে জাহাজ আরও ওপরে ভেসে ওঠে। এরপর জাহাজ লেকের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায়।
শেষ প্রান্তে আসার পর আবার একটি লকের মধ্যবর্তী এলাকায় জাহাজ থামে। সেখানে পানি সমুদ্র ছেড়ে দিয়ে জাহাজকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতায় নিয়ে আসা হয়। পানামায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় লেকে সাধারণত পানির ঘাটতি হয় না।
লেকের মাধ্যমে পানামা খালের খননকাজের ব্যয় কমানো হয়েছে কিন্তু এরপরও প্রায় ৫০ মাইল দীর্ঘ এই পানিপথ তৈরিতে ২৮৬ মিলিয়ন টন মাটি খুঁড়তে হয়েছে যা সুয়েজ খালের ১৩ গুণ। নানা স্থান থেকে ৮০ হাজারের মত শ্রমিক কাজ করতে এসেছিলেন আর ম্যালেরিয়া ও ইয়োলো ফেভার বা পীতজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৪ হাজারের মত শ্রমিক মারা গেছে। আধুনিককালের সপ্তাশ্চর্যগুলোর একটি হিসেবে দেখা হয় এই পানামা খালকে।
পানামায় বেড়ানোর অন্যতম আকর্ষণ এই পানামা খাল। এখানকার জাদুঘরে খাল খননের সময়কার স্মারকগুলো এখনো দর্শনার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আছে। উত্তর আমেরিকা আর দক্ষিণ আমেরিকাকে যুক্ত করা পানামা ইসমাস থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে সূর্যোদয় আর আটলান্টিক মহাসাগরে সূর্যাস্ত দেখা সম্ভব। এছাড়া ক্রান্তীয় বনভূমির মধ্য দিয়ে যাওয়া রেলপথটিও পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ।