২২ মে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস। জাতিসংঘের ২০০২ সালের সাধারণ সভায় ২০১০ সালকে ‘আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। অপুর্ব জীববৈচিত্রে ভরা আমাদের এই পৃথিবী। কিন্তু স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের জন্য, তাদের অমানবিক ও অবিবেচকের মতো বিভিন্ন কার্মকান্ডের জন্য হারাতে বসেছে জীববৈচিত্র্য। কিছুদিন আগেও বনে-বাদাড়ে যেসব পশুপাখি-বৃক্ষের প্রাচুর্য ছিলো এখন সেগুলোর ছিটেফোঁটাও নেই। প্রকৃতির অপার সৃষ্টি এই জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্যই সারা বিশ্বে এই দিবসটি বিশেষভাবে পালিত হয়ে থাকে।
জীববৈচিত্র্য বিলীন হবার কারণ ও প্রতিকার:
প্রকৃতির অপার সৃষ্টি জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে সে অনুপাতে জায়গা-জমির পরিমাণ বাড়ছে না। অতিরিক্ত মানুষের বাসস্থান তৈরির জন্য উজাড় করা হচ্ছে বনজঙ্গল। ফলে এসব স্থানে বসবাসকারী জীবজন্তুর জীবন পড়ছে হুমকির মুখে।
অপরদিকে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের জন্য পরিবেশ দূষণও দায়ী। একদিকে অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে জীববৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে অন্যদিকে স্বার্থান্বেষী ও অবিবেচক এই মানুষের নানা কর্মকান্ডের ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
প্রতিবছর যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে অনুপাতে প্রাকৃতিক সম্পদ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এর ফলে অতিরিক্ত চাপ পড়ছে বায়ু, মাটি ও পানির উপর। এর ফলে প্রতিনিয়ত এসব উপাদান ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে বায়ু, মাটি ও পানিতে বসবাসকারী জীবগুলোর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে এবং এক সময় তারা মৃত্যু মুখে পতিত হচ্ছে।
যানবাহনের কালো ধোঁয়া, কলকারখানার কালো ধোঁয়ার কারণে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে বায়ু। কিন্তু যানবাহনের কালো ধোঁয়া প্রতিরোধের জন্য সরকারিভাবে ফিটনেস বিহীন যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তার যথাযথ পালনের অভাবে তা সরাসরি পরিবেশ দূষণ করছে। অপরদিকে কলকারখানা নির্মাণের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকলেও তা নিয়মের গন্ডিতেই আবদ্ধ রয়ে গেছে। সরকারি নির্দেশনাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে শিল্প মালিকগণ যত্রতত্র, প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা না মেনে গড়ে তুলছে কল-কারখানা। উভয়ক্ষেত্রেই নিয়মের অসারতা ও মানুষের স্বার্থান্বেষী ও অবিবেচক মনোভাব দায়ী।
পানি দূষণের মূলেও রয়েছে এসব কল-কারখানা। কল-কারখানার বর্জ্য পদার্থ সরাসরি ফেলা হচ্ছে নদীতে। এসব বর্জ্য পদার্থ নদীর পানিকে দূষিত করে তুলছে। যার ফলে নদীতে বসবাস কারী মাছ সহ অন্যান্য প্রাণী মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে। অথচ আইন অনুযায়ী কোনোভাবেই কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ সরাসরি নদীর পানিতে ফেলার নিয়াম নেই। এখানেও নিয়মের অসারতা ও মানুষের স্বার্থান্বেষী ও অবিবেচক মনোভাব দায়ী।
এবার আসা যাক মাটি দূষণের দিকে। অধিক ফলনের আশায় জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহারের ফলে মাটির নিচে বসবাসকারী অণুজীবগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই রাসায়নিক সার আবার বৃষ্টির পানির সাথে মিশে নদীর পানিতে গিয়ে পড়ছে। ফলে নদীর পানিও দূষিত হচ্ছে। রাসায়নিকের প্রভাবে ভূমি তার স্বাভাবিক উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে।
প্রতিকার:
উপরোক্ত সকল ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করলে দেখা যাবে অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণেই সমস্যাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে। তাই সর্বপ্রথমে এই দিকটিতে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। পাশাপাশি আমাদেরকে নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজেদের স্বার্থে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে। এভাবে ধ্বংস হতে হতে একসময় এই জীববৈচিত্র্য থেকে বিলীন হয়ে যাবে। এগুলো আমাদের জীবনেরই একটি অংশ।