জাদুঘর হচ্ছে অতীত ও ভবিষ্যতের সেতুবন্ধন। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেরই বিভিন্ন বিষয়ক একাধিক জাদুঘর রয়েছে। জাদুঘর বলতে বোঝায় এমন একটি স্থান যেখানে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের সংগ্রহ সংরক্ষণ করা হয়। আগেকার দিনে জাদুঘরগুলো গড়ে উঠত ধনাঢ্য ব্যক্তিদের নিজস্ব বা পারিবারিক প্রয়াসে বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়াসে। সময়ের আবর্তনে এখন প্রতিটি জাতীয় নিজস্ব স্বকীয়তা, ইতিহাস, ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য গড়ে তুলছে স্বতন্ত্র জাদুঘর। উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও একাধিক জাদুঘর রয়েছে। তার মধ্যে শাহবাগে অবস্থিত রয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘর। জাদুঘরের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে প্রতি বছর একটি দিনকে জাদুঘর দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সেই দিনটি হলো ১৮ই মে। প্রতি বছরই কোনো না কোনো বিশেষ স্লোগান থাকে। এ বছরের এই দিবসটি স্লোগান “সমাজ পরিবর্তনে জাদুঘর”।
ইতিহাস:
বাংলায় জাদুঘরের ধারণা এসেছে ব্রিটিশদের মাধ্যমে। ভারত মহাদেশে জাদুঘরের ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল ১৭৯৬ সালে। ভারতের এশিয়াটিক সোসাইটি এই উদ্যোগ সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন। প্রত্নতাত্ত্বিক, জাতিতাত্ত্বিক, ভূতাত্ত্বিক এবং প্রাণী বিষয়ক নমুনা সংগ্রহ ও সেগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
এশিয়াটিক সোসাইটির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস। ১৮০৮ সালে তার উদ্যোগে কলকাতার পার্ক স্ট্রীটের একখন্ড জমিতে একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৮১৪ সালে এই ভবনে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম জাদুঘর ‘এশিয়াটিক সোসাইটি মিউজিয়াম’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বাংলাদেশে জাদুঘর:
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী শহরে স্থাপিত বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। ১৯১০ সালের এপ্রিল মাসে দীঘাপতিয়া রাজ পরিবারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে শরৎকুমার রায়ের উদ্যোগে এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গৌরব বর্তমান ও ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে অবহিত করা এবং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে জনগণকে সমন্বিত করা। কীর্তিমানদের বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্মের উজ্জ্বল স্মৃতি ধরে রাখার জন্য যেসব জাদুঘর গড়ে উঠেছে এগুলোর বিশেষ এক ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক মূল্য থাকে। বাংলাদেশে এই বৈশিষ্ট্যের কয়েকটি জাদুঘর সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে বিগত দুই দশকে। যেমন ঢাকায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, চট্টগ্রামে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর, সিলেটে ওসমানী স্মৃতি জাদুঘর, ময়মনসিংহে নজরুল স্মৃতি জাদুঘর, শিলাইদহে রবীন্দ্র জাদুঘর। সবচেয়ে আশার কথাটি হচ্ছে, এই অঞ্চলে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার শতবর্ষে ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু উল্লেখযোগ্য জাদুঘর প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে বিগত এক দশকে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাঙালিসমগ্র জাদুঘর (ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত), জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর (২০০৭ সালে এলিফ্যান্ট রোডে শহীদ জননীর বাড়ির একটি ফ্লোরে স্থাপিত)।