১৬ই মে ফারাক্কা দিবস। ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির মাধ্যমে ফারাক্কার বাঁধ চালু হয়। ১৯৭৬ সালের এই দিনে মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে সারাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দান থেকে মরণ বাঁধ ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চে অংশগ্রহণ করেন। দেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জনদুর্ভোগের জন্য তারা এ দিন লংমার্চ করে ভারত সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানায়। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন মওলানা ভাসানী। তাই এ দিনটি আজও শোষণ, বৈষম্য আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং দাবি আদায়ের পক্ষে বঞ্চিতদের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে।
ফারাক্কা বাঁধ কি?
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির মধ্যদিয়ে নদীপ্রবাহও বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের পটভূমিতে অরুণাচল অঞ্চল ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে কৌশলগতভাবে আসাম-ত্রিপুরার নিরাপত্তা হুমকির মুখে পতিত হয়। এ অবস্থায় ভারতের ভৌগোলিক নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টারা উপলব্ধি করেন গঙ্গার ওপর দিয়ে দ্রুত যুদ্ধ সরঞ্জাম পূর্বাঞ্চলের নিয়ে যাওয়ার স্বার্থে পানি প্রবাহের নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই পরিকল্পনার আলোকেই ১৯৬৪ সালে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মিত হয়। এটা মূলত পানির নিয়ন্ত্রণ ও যুদ্ধকালীন সময়ে পানিপথে সংযোগ ব্যবস্থা চালু রাখতে গড়ে তোলা হয় ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্প। পাকিস্তান ভারতের এই পানি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ১৯৭২ সালে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সমাপ্ত হয়। এরই মধ্যে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭৪ সালে ভারত পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালু করার কথা বলে বাংলাদেশের সমর্থন নিলেও অদ্যাবধি ওই বাঁধ বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের জন্য আজও মরণফাঁদ হিসেবেই রয়ে গেছে।
বর্তমান অবস্থা:
মাওলানা ভাসানী আজ বেঁচে নেই। কিন্তু নদীর বিপন্ন দশা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুকনো মৌসুমে নদী এখন প্রায় পানিহীন অবস্থায় পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই অবস্থা আরো শোচনীয়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পানি কম পেয়ে প্রতি বছরই লিখিত-অলিখিতভাবে প্রতিবাদ করে আসলেও এ ব্যাপারে ভারতের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকেও বিষয়টি বারবার উত্থাপন করা হলেও তা কোন সুফল বয়ে আনতে পারেনি। শুধু আশ্বাসের বাণীই শোনা গেছে। এতে প্রমাণিত হয়, ভারত চুক্তি অনুযায়ী তার ন্যায্য পানি প্রবাহিত হতে দিচ্ছে না। উপরন্তু সাম্প্রতিককালে টিপাইমুখ বাধ নামে নতুন একটি প্রকল্প চালুর করতে চলেছে ভারত।