১৯২১ সালের ১লা জুলাই এক সময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। দিনটিকে স্মরণ করতে এখন প্রতিবছর ১লা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হয়।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে যখন ঢাকা রাজধানী হয় তখন এ অঞ্চলের শিক্ষাক্ষেত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নাটকীয় অগ্রগতি হতে থাকে। কিন্তু কলকাতা-কেন্দ্রিক অভিজাত শ্রেণীর বিরোধিতার মুখে বঙ্গভঙ্গ রদের পর এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল তা সামলাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়া হয়। কলকাতা-কেন্দ্রিক অভিজাত শ্রেণী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারও বিরোধিতা করে। তবে ব্রিটিশ সরকার তা আমলে নেয়নি।
স্যার নওয়াব সলিমুল্লাহ, সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, এ.কে. ফজলুল হক প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জোরালো দাবি তুলে ধরেন। ড. পি. জে. হার্টগ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য।
শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের কঠোর পরিশ্রমের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ হিসেবে পরিচিতি পায়। দেশভাগের পূর্ব পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি এশিয়ার মধ্যে অন্যতম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গণ্য হত। শুরুতে এটি কোন এফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। তবে ঢাকার সাতটি কলেজকে এর আওতায় আনা হয়। দেশভাগের পর তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম তদারক করাটাও এর দায়িত্বে পরিণত হয়।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ৪৭ পরবর্তী স্বাধিকারের সংগ্রাম, স্বাধীনতা যুদ্ধ, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামসহ প্রতিটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে।
বর্তমান বাংলাদেশেও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা গ্রহণকারীদের আধিক্য রয়েছে। বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী পদক সবচেয়ে বেশি পেয়ছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণই। এছাড়া পৃথিবীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ কাজ করছেন।
প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপাচার্য নিজে যোগ দেন। বিশেষ শোভা যাত্রা, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোয় আলোকসজ্জা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, দাবা প্রতিযোগিতা, নাটক, গ্রন্থাগারে পাণ্ডুলিপি প্রদর্শনী ইত্যাদি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
গ্রন্থনা: শিহাব উদ্দিন আহমেদ
প্রাসঙ্গিক লেখা: